ঝড়

ঝড়
~~~~~
পথে মানুষটির সাথে হঠাৎ দেখা হ’য়ে গেল

বুড়ো, দৈত্য সেই ওক গাছটার-
মাথায় শিং-এর ডালপালা নিয়ে
গাঢ় সবুজ প্রাসাদের দেওয়ালটার ঠিক সামনে
যেন পাথর হ’য়ে গেছে এক বিশাল হরিণ,
ওই দেওয়াল হেমন্তের সমুদ্রের।

ঝড় এসেছে উত্তর দিক থেকে। লাল রঙ রোওয়ানবেরী
পাকবার সময় হয়ে গেছে। ওক গাছের অনেক উপরে নক্ষত্রগুলো
নিজেদের আস্তাবলে পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে সব পিষে ফেলছে। সারা রাত জেগে মানুষটি সেই শব্দই শুনছে।

[ From: The Half-Finished Heaven
Tomas Tranströmer

Translated by: Robert Bly]

দুজন

~~~~~
আলো নিভিয়ে দেয় ওরা, বাল্বের গোল শাদা কাচ জ্বলে
কেবল এক মুহূর্ত; তারপর গলে যায়, ট্যাবলেটের মত
অন্ধকার গ্লাসের ভিতর। এরপর উত্থান।
স্বর্গের কালোয় হোটেলের দেওয়ালগুলো ছুটে যায়।

প্রেমের সব নড়াচড়া থেমে যায়, ঘুমায় ওরা,
কিন্তু ঠিক তখন মুখোমুখি
ওদের মনের সবচেয়ে গোপন কথাগুলো-
স্কুলের ছেলেটার আঁকা ছবিতে,
ভেজা কাগজের উপর একাকার
দুটো রঙের মত।


অন্ধকার,সব চুপচাপ। তবুও আজ রাতে আরো একটু যেন এগিয়ে আসে
এই শহর। আলোহীন জানালার সাথে। বাড়িগুলোও কাছাকাছি।
খুব ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়ায় একঝাঁক মানুষ, পাশাপাশি অপেক্ষায় -
মুখগুলো শুন্যতার ছবি।
(এই অনুবাদটিতে রবার্ট ব্লাই ও রবিন ফুল্টন-এর করা দুটো ইংরেজি অনুবাদ-এরই সাহায্য নেয়া হয়েছে।)

এক মৃত্যুর পর

~~~~~~~~~~~~
একবার এক প্রচন্ড বেদনা ফেলে রেখে গেল
ধূমকেতুর ঝিকমিকে, লম্বা লেজ।
দিনের পর দিন তা ঘরে আটকে রাখল আমাদের। টিভির ছবিগুলোতে বরফ ঝড় নামল।
আস্তে আস্তে টেলিফোনের তারে ফোঁটায় ফোঁটায় জমে উঠল শীতকাল।

শীতের সূর্যের ভিতর কেউ কেউ তবু ধীরে ধীরে যেতে পারল স্কী করতে
ঝোঁপঝাড়ের মাঝ দিয়ে যেখানে এখনও ঝুলে আছে কয়েকটা মরাপাতা।
পুরনো, ছেঁড়াখোড়া টেলিফোন ডিরেকটরির পৃষ্ঠার মত দেখতে ওরা।
মানুষের নামগুলো যেখানে আস্ত গিলে খেয়েছে শীতলতা।

হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে এখনও অপূর্ব লাগে
কিন্তু সত্যিকারের শরীরের থেকে ছায়াকে প্রায়ই বেশি জীবন্ত মনে হয়।
কালো ড্রাগনের আঁশে ছাওয়া বর্মের পাশে
ওই সামুরাই অর্থহীন।
( রবার্ট ব্লাই-এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে)


আলেগ্রো
~~~~~~~
এক অন্ধকার দিনের শেষে আমি পিয়ানো বাজাই হাইডেনের সুর,
আঙ্গুলে অল্প উষ্ণতা ফিরে আসে।
পিয়ানোর কী আর হ্যামারের ওঠানামায়।
উচ্ছল ওই সুর সবুজ। আর নিস্তব্ধতায় ভরা।
স্বাধীনতা বেঁচে থাকে, সেই সুর বলে যায়।
এবং শেষ পর্যন্ত সীজারকে রাজকর দেয় না কোন মানুষ।
আমি আমার হাইডেন পকেটে হাত ঢুকাই।
যেন সবকিছু নিয়েই শান্ত এক লোক।
আমি আমার হাইডেন পতাকা ওড়াই। যেখানে লেখা থাকেঃ
আমরা আত্মসমর্পণ করি না। কিন্তু শান্তি চাই।
ঢালের উপর দাঁড়ানো এক কাচের বাড়ি হচ্ছে সঙ্গীত;
পাথর উড়ে যাচ্ছে, পাথর গড়িয়ে পড়ছে।
পাথর সোজা বাড়ির ভিতর দিয়ে চলে যাচ্ছে
তবু জানালার শার্সির কোন কাচ-ই ভেঙ্গে পড়ছে না।
( রবার্ট ব্লাই-এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে)


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কল্যাণী রমা

কল্যাণী রমা

কল্যাণী রমা- জন্ম ঢাকায় ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং- বি টেক করেছেন এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে
প্রকাশিত বইঃ
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলোইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁসঅ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ তে জাগিহেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ