বরফ ঢাকা জঙ্গলে, স্বপ্নের ভিতর হেঁটে যায় যে কবি
-কল্যাণী রমা
বছরের বেশির ভাগ সময় নীল, বেগুনি কিংবা প্যাস্টেল রঙের ফুল নয়, বরফে ঢেকে থাকে সুইডেন-এর গ্রানাইট মাটি। সেই শান্ত স্তব্ধতার ভিতর থেকে; এক অল্প সময় সূর্যের আলো দেখতে পাওয়া পৃথিবী থেকে; লাইকেন আর বুনো মসে ছাওয়া স্প্রুস বনের ভেজা, ভেজা অন্ধকার থেকে উঠে এসেছেন ২০১১ সালের সাহিত্যে নোবেলজয়ী কবি টোমাজ ট্রান্সট্রোমার। বরফের উপর শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত নেড়ে, নেড়ে তৈরী হওয়া এক অলৌকিক ‘স্নো-এঞ্জেলের’ মত।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের একাকীত্ব দিয়ে এক বিশেষভাবে মানুষকে টানে। একইভাবে ট্রান্সট্রোমার-এর কবিতা মুগ্ধ করে আমাদের। বুঝিস্বপ্নের ভিতর জেগে থেকে সেখানেই বসবাস করে চলেছে কিছু মানুষ। আর বারবার সেই স্বপ্নের ভিতরই যেন পৃথিবী ছেড়ে কোথাও একটা উড়ে চলে যাচ্ছে সবাই। আর ঠিক তার পরের মুহূর্তেই ধাক্কা খেয়ে, ঘুম ভেঙ্গে সব স্বপ্ন ছিঁড়ে, প্যারাশুটে করে আছড়ে পড়ছে তারা প্রতিদিনের বাস্তব জীবনে।
ট্রান্সট্রোমার-এর কবিতা পড়লে বরফ ঢাকা পাইন কিংবা বার্চ বনের ভিতর একা, একা হেঁটে বেড়ানোর মত এক অনুভূতি হয়। তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ যেন আলো আর অন্ধকারের ভিতর রঙ বদল করে করে আঁকা কোন ছবি।এবং দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ সব উপমার ব্যবহারে তার কবিতা অপ্রত্যাশিতভাবে সবকিছু শেষ হ’য়ে যাওয়ার পরও মানুষের বেঁচে থাকবার চরম বিস্ময়কেই তুলে ধরে প্রতিবার।
একদম পাশাপাশি শুয়ে থাকা দু’জন মানুষ, মানুষীর জীবনের অর্থহীন অসহায়তা তাঁর কবিতায় এক মুহূর্তের জন্য জ্বলে উঠে তারপর কাচের গ্লাসের ভিতর এক অন্ধকার তেতো ওষুধের মত গলে যায়। তবু তারপরও কিভাবে যেন বেঁচে থাকে তাঁর পৃথিবীর মানুষ। জলে ভেজা কাগজের উপর একসাথে মিশে যাওয়া দু’টো রঙ হয়ে - জলরঙে আঁকা ছবির মত।
একা একা হারিয়ে যাওয়া গ্রামের পথ, প্রকৃতি; নিঃসঙ্গ জঙ্গল, সেই জঙ্গলকে ঘিরে বাল্টিক সাগরের সবুজ জল, দ্বীপ, জাহাজঘাটা এবং একই সাথে এই সব কিছুর বিপরীতে জঙ্গলের কিনারায় কুষ্ঠরোগীদের শূন্য, নির্জন ঘরের ছাদ তাঁর কবিতায় এক অপরূপ রহস্যময়তার সুর এনে দেয়। আর সেই সাথে হাত পা অবশ ক’রে দেওয়া এক ভয় - গভীর রাত নেমে পড়বার আগে হয়ত আমরা এইসব কুষ্ঠরোগীদের পেরিয়ে জীবনের কোথাও পৌঁছাতে পারব না...
তবু সব অন্ধকারের শেষে ট্রান্সট্রোমার-এর কবিতার সুর তার নিজস্বতায় আমাদের প্রতিদিনের ব্যর্থ জীবনকে এমন কোথাও নিয়ে যায়, যেখানে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে কাচের তৈরী বাড়ির দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলা যায় না। একইভাবে শরীরের একদিক অবশ হয়ে ট্রান্সট্রোমারের কথা প্রায় থেমে গেলেও থামিয়ে রাখা যায় না তাঁর কবিতার স্বরকে,গলা টিপে কোনভাবেই মেরে ফেলা যায় না এই মৃত্যুবিজয়ী কবি-র কেবল একহাতের আঙ্গুলগুলোর নীচেই উচ্ছল হয়ে ওঠা কোন এক পিয়ানোর সুর, প্রাণ।
প্রায় চল্লিশ বছর আগে লেখা ‘ভোরের পাখি’ নামের এক কবিতাতেও কবিতার ভিতর দিয়ে অমরত্ব সৃষ্টির এই পথ খুব অদ্ভুতভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। সে কবিতায় কবি নিজে মিলিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর শরীর ক্রমশঃ ছোট থেকে ছোট হ’য়ে আসছে। কিন্তু কবি-র কবিতা ঢেকে ফেলছে কবি-র পৃথিবী। আর ঠিক তখনই যেন এক সত্যিকারের কবিতার জন্ম হচ্ছে যখন সেই কবিতা স্বয়ং কবিকেই পাখির বাসার ভিতর বেঁচে থাকা তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব থেকে তাঁকেই বাইরে ছুড়ে ফেলছে।
এবং এভাবেই শেষপর্যন্ত জয়ী হচ্ছে মানুষ, বেঁচে থাকছে তারা ট্রান্সট্রোমারের কবিতায়, তাদের জীবনের খুব পলকা সব অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর – প্রতিদিন, স্বপ্নের ভিতর।
বছরের বেশির ভাগ সময় নীল, বেগুনি কিংবা প্যাস্টেল রঙের ফুল নয়, বরফে ঢেকে থাকে সুইডেন-এর গ্রানাইট মাটি। সেই শান্ত স্তব্ধতার ভিতর থেকে; এক অল্প সময় সূর্যের আলো দেখতে পাওয়া পৃথিবী থেকে; লাইকেন আর বুনো মসে ছাওয়া স্প্রুস বনের ভেজা, ভেজা অন্ধকার থেকে উঠে এসেছেন ২০১১ সালের সাহিত্যে নোবেলজয়ী কবি টোমাজ ট্রান্সট্রোমার। বরফের উপর শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত নেড়ে, নেড়ে তৈরী হওয়া এক অলৌকিক ‘স্নো-এঞ্জেলের’ মত।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের একাকীত্ব দিয়ে এক বিশেষভাবে মানুষকে টানে। একইভাবে ট্রান্সট্রোমার-এর কবিতা মুগ্ধ করে আমাদের। বুঝিস্বপ্নের ভিতর জেগে থেকে সেখানেই বসবাস করে চলেছে কিছু মানুষ। আর বারবার সেই স্বপ্নের ভিতরই যেন পৃথিবী ছেড়ে কোথাও একটা উড়ে চলে যাচ্ছে সবাই। আর ঠিক তার পরের মুহূর্তেই ধাক্কা খেয়ে, ঘুম ভেঙ্গে সব স্বপ্ন ছিঁড়ে, প্যারাশুটে করে আছড়ে পড়ছে তারা প্রতিদিনের বাস্তব জীবনে।
ট্রান্সট্রোমার-এর কবিতা পড়লে বরফ ঢাকা পাইন কিংবা বার্চ বনের ভিতর একা, একা হেঁটে বেড়ানোর মত এক অনুভূতি হয়। তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ যেন আলো আর অন্ধকারের ভিতর রঙ বদল করে করে আঁকা কোন ছবি।এবং দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ সব উপমার ব্যবহারে তার কবিতা অপ্রত্যাশিতভাবে সবকিছু শেষ হ’য়ে যাওয়ার পরও মানুষের বেঁচে থাকবার চরম বিস্ময়কেই তুলে ধরে প্রতিবার।
একদম পাশাপাশি শুয়ে থাকা দু’জন মানুষ, মানুষীর জীবনের অর্থহীন অসহায়তা তাঁর কবিতায় এক মুহূর্তের জন্য জ্বলে উঠে তারপর কাচের গ্লাসের ভিতর এক অন্ধকার তেতো ওষুধের মত গলে যায়। তবু তারপরও কিভাবে যেন বেঁচে থাকে তাঁর পৃথিবীর মানুষ। জলে ভেজা কাগজের উপর একসাথে মিশে যাওয়া দু’টো রঙ হয়ে - জলরঙে আঁকা ছবির মত।
একা একা হারিয়ে যাওয়া গ্রামের পথ, প্রকৃতি; নিঃসঙ্গ জঙ্গল, সেই জঙ্গলকে ঘিরে বাল্টিক সাগরের সবুজ জল, দ্বীপ, জাহাজঘাটা এবং একই সাথে এই সব কিছুর বিপরীতে জঙ্গলের কিনারায় কুষ্ঠরোগীদের শূন্য, নির্জন ঘরের ছাদ তাঁর কবিতায় এক অপরূপ রহস্যময়তার সুর এনে দেয়। আর সেই সাথে হাত পা অবশ ক’রে দেওয়া এক ভয় - গভীর রাত নেমে পড়বার আগে হয়ত আমরা এইসব কুষ্ঠরোগীদের পেরিয়ে জীবনের কোথাও পৌঁছাতে পারব না...
তবু সব অন্ধকারের শেষে ট্রান্সট্রোমার-এর কবিতার সুর তার নিজস্বতায় আমাদের প্রতিদিনের ব্যর্থ জীবনকে এমন কোথাও নিয়ে যায়, যেখানে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে কাচের তৈরী বাড়ির দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলা যায় না। একইভাবে শরীরের একদিক অবশ হয়ে ট্রান্সট্রোমারের কথা প্রায় থেমে গেলেও থামিয়ে রাখা যায় না তাঁর কবিতার স্বরকে,গলা টিপে কোনভাবেই মেরে ফেলা যায় না এই মৃত্যুবিজয়ী কবি-র কেবল একহাতের আঙ্গুলগুলোর নীচেই উচ্ছল হয়ে ওঠা কোন এক পিয়ানোর সুর, প্রাণ।
প্রায় চল্লিশ বছর আগে লেখা ‘ভোরের পাখি’ নামের এক কবিতাতেও কবিতার ভিতর দিয়ে অমরত্ব সৃষ্টির এই পথ খুব অদ্ভুতভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। সে কবিতায় কবি নিজে মিলিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর শরীর ক্রমশঃ ছোট থেকে ছোট হ’য়ে আসছে। কিন্তু কবি-র কবিতা ঢেকে ফেলছে কবি-র পৃথিবী। আর ঠিক তখনই যেন এক সত্যিকারের কবিতার জন্ম হচ্ছে যখন সেই কবিতা স্বয়ং কবিকেই পাখির বাসার ভিতর বেঁচে থাকা তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব থেকে তাঁকেই বাইরে ছুড়ে ফেলছে।
এবং এভাবেই শেষপর্যন্ত জয়ী হচ্ছে মানুষ, বেঁচে থাকছে তারা ট্রান্সট্রোমারের কবিতায়, তাদের জীবনের খুব পলকা সব অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর – প্রতিদিন, স্বপ্নের ভিতর।
You are writing really well. We need a complete book of poems, translated by you. Hope, you will not be stopping without giving it a try, just hope..
উত্তরমুছুন-no name needed